সুধিরের জীবিকার পথ করে দিল জ্ঞানের আলো পাঠাগার

জ্ঞানের আলো পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মনিরুজ্জামান শেখ জুয়েল বলেন, ‘জ্ঞানের আলো পাঠাগারের ফেসবুক আইডি থেকে সহায়তা চাওয়া হয় পরিবারটিকে একটি দোকানঘর করে দেয়ার জন্য। বিভিন্ন মানবিক ব্যক্তি এগিয়ে আসেন। সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় আন্তর্জাতিক সংস্থা এসএফআইও। সংগ্রহ হয় ৪০ হাজার টাকা।’

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার হিজলবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা সুধির বাড়ৈ। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ও দারিদ্রতার সঙ্গে যুদ্ধ করে পরিবার নিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলেন তিনি। একবেলা খাবার জুটলেও অন্যবেলা না খেয়েই পার করতে হত।

সুধির বাড়ৈর পাশে দাঁড়িয়েছে কোটালীপাড়ার মানবিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘জ্ঞানের আলো পাঠাগার’। তারা ফেসবুকের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে পরিবারটিকে মুদি মালামালসহ একটি চায়ের দোকান স্থাপন করে দিয়েছে।

উপজেলার কলাবাড়ি ইউনিয়নের হিজলবাড়ি গ্রামে নির্মিত দোকানঘরটি রোববার সকালে উদ্বোধন করেন কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজিম উদ্দিন।

স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার কলাবাড়ি ইউনিয়নের হিজলবাড়ি গ্রামের প্রয়াত সুনীল চন্দ্র বাড়ৈর ছেলে সুধির বাড়ৈ শারীরিক প্রতিবন্ধী। ঠিকমতো উপার্জন করতে না পারায় বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে সুধির অসহায় জীবনযাপন করছিলেন। পাশাপাশি দুই সন্তানের লেখাপড়ার খরচ মেটাতে দিশেহারা সুধিরের পরিবারকে স্বাবলম্বী করতে এগিয়ে আসে জ্ঞানের আলো পাঠাগার।

সুধির বাড়ৈ বলেন, ‘চিকিৎসার জন্য অনেক আগেই বন্ধক রেখেছি পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জমি। এনজিও থেকে ঋণ নিয়েও চিকিৎসা করিয়েছি। এনজিওর কিস্তির টাকা, পরিবারের ভরণপোষণের খরচ, সন্তানের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে দিশেহারা হয়ে যাই। শারীরিক কারণে ঠিকমতো কাজও করতে পারি না।

‘জ্ঞানের আলো পাঠাগারের দেয়া চায়ের দোকানটি আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেবে। এটা আমার বেঁচে থাকার জন্য একটি অবলম্বন।’

জ্ঞানের আলো পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মনিরুজ্জামান শেখ জুয়েল বলেন, ‘সুধির বাড়ৈর পরিবারটি চরম অসহায়ত্বের মাঝে জীবনযাপন করছিল। বিষয়টি জেনে আমরা উদ্যোগ নেই পরিবারটির জন্য কিছু একটা করার।

‘জ্ঞানের আলো পাঠাগারের ফেসবুক আইডি থেকে সহায়তা চাওয়া হয় পরিবারটিকে একটি দোকানঘর করে দেয়ার জন্য। বিভিন্ন মানবিক ব্যক্তি এগিয়ে আসেন। সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় আন্তর্জাতিক সংস্থা এসএফআইও। সংগ্রহ হয় ৪০ হাজার টাকা।’

তবে এই দোকানের ওপর নির্ভর করে ছয় সদস্যের পরিবার চলতে হলে আরও কিছু মালামাল প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

কলাবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট বিজন হালদার বলেন, ‘সুধির বাড়ৈর পরিবারটি সত্যিই খুব অভাব-অনাটনের মধ্যে দিয়ে দিনযাপন করছিল। সরকারিভাবে সুধির বাড়ৈকে প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়া হয়। যা দিয়ে পুরো পরিবারের খরচ চালানো কষ্টকর।’

কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজিম উদ্দিন বলেন, ‘জ্ঞানের আলো পাঠাগার শিক্ষামূলক নানা কর্মকাণ্ডসহ সব সময় অসহায়-দরিদ্র মানুষের কল্যাণে কাজ করে আসছে। এরই অংশ হিসেবে সুধির বাড়ৈর পরিবারকে স্বাবলম্বীকরণে দোকানঘর নির্মাণ করে দিয়েছে জ্ঞানের আলো পাঠাগার।’